সরকারি বিলের টাকা এবি ব্যাংকের মনিরুলের পকেটে 

রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান তিতাসের গ্রাহকদের এবি ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়া টাকা ওই ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আর্তসাৎ করেছেন। গাজীপুরের বোর্ড বাজার শাখায় তিনি ৮৬ টি একাউন্ট থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।

সরকারি বিলের টাকা এবি ব্যাংকের মনিরুলের পকেটে 

রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান তিতাসের গ্রাহকদের এবি ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়া টাকা ব্যাংকটির তৎকালীন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন। গাজীপুরের বোর্ড বাজার শাখায় তিনি ৮৬ টি একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাবেক এবি ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের এসব অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এবি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মনিরুল ইসলাম গাজীপুরের বোর্ড বাজার শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ৮৬টি বিভিন্ন একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। সেখানে তিনি ডিসেম্বর ’১২ থেকে অষ্টোবর ’১৭ পর্যন্ত এই শাখায় থেকে তিতাস ও ডেসকোর গ্রাহকদের বিল জমা না দিয়ে অভিনব উপায়ে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, মনিরুল ইসলাম বোর্ড বাজার শাখায় কাজ করার সময় তিতাস ও ডেসকোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিল কালেকশন, ফান্ড ট্রান্সফার ও ক্লিয়ারিং এর দায়িত্ব পালন করতেন। তারপর সেই টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট ব্যাংকের মাধ্যমে হস্তান্তর করতেন। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর টাকা কারওয়ান বাজার শাখায় কোম্পানীর কেন্দ্রীয় একাউন্টে জমা দিতেন। পরবর্তীতে ’১৭ সালের শেষের দিকে তিতাস একটি চিঠির মাধ্যমে জানায়, তাদের ব্যাংক হিসেবের গড়মিলের কথা। পরবর্তীতে বোর্ড বাজার শাখা হতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে,  ’১৬ সালে মনিরুল ইসলাম ওই ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সাক্ষর জাল করে তিতাসের গাজীপুরের লোকাল অফিসে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট ব্যালেন্স কনফার্মেশন চিঠি দেয়। সেই সাথে, তিনি বিভিন্ন সময় তিতাসের গাজীপুর অফিসে মিথ্যা তথ্য পাঠায়। এসব বিষয় আমলে নিয়ে এবি ব্যাংকের বোর্ড বাজার শাখা অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করে।

চিঠির প্রেক্ষিতে মনিরুল ইসলাম ওই শাখা প্রধানকে বিভিন্ন গ্রাহকের অননুমোদিত ভাবে টাকা জামা করার বিষয়টি জানান। সেইসাথে তিনি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে তার টাকা আত্নসাতের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। পরবর্তীতে সেই টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর এবি ব্যাংক বিষয়টি তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। ওই বিভাগ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মনিরুল ইসলাম ময়মনসিংহ শাখায় দায়িত্বরত অবস্থায় বিভিন্ন ভূয়া ও মিথ্যা হিসাব খুলে লোন ডিসবার্সমেন্ট দেখিয়ে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেন উক্ত শাখা ও হেড অফিসের অনুমোদন ছাড়াই। সেখানে আরো বলা হয়, বোর্ড বাজার শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিতাসের বিল উক্ত কোম্পানীর ব্যাংকে জমা না করে নিজের বিভিন্ন নামে বেনামে ব্যাংক হিসেবে জমা দেন।

তিনি মোট ৮৬ ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সর্বমোট ৯ কোটি ৯৬ লক্ষ (প্রায় ১০কোটি) টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্নসাৎ করেন।

মনিরুল ইসলামের ৮৬টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে তিনটিতে লেনদেনের বিষয়ে জানতে পারেন এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই তিন হিসেবে নূর হোসেন, রুহিলা বেগম ও স্টার ফিলিং স্টেশন এর নামে যথাক্রমে, ৫১ লক্ষ, ১ কোটি ২৯ লক্ষ এবং ২৫ লক্ষ টাকা জমা করার তথ্য পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে কুষ্টিয়া ব্রাঞ্চে চাকুরীকালীন সময় মনিরুল ইসলাম গ্রাহকদের টাকা জমা না রেখে বিভিন্ন উপায়ে তসরুপের ঘটনা ঘটায়। ওখান থেকে ময়মনসিংহে আসার পর নানান অনিয়ম করে। সর্বশেষ গাজীপুরের বোর্ড বাজার ব্রাঞ্চে আসার পর অভাবনীয় কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।   

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরে কথা বলবো বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এ বিষয়ে এবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তানিয়া খান বলেন, অনেক আগের মামলা এখন কি অবস্থায় আছে জানিনা।

এবি ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও হেড অব লিগ্যাল নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তার সব তথ্য সংগ্রহ করেছি, পুলিশে অভিযোগ করেছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই মামলা হবে। এছাড়া, দুদকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আশা করছি অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো।

মনিরুল ইসলামের নিকট কোন টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে তিন কোটি টাকা রিকভারি হয়েছে। এছাড়া, তিতাস, ডেসকো  বা অনান্য কর্তৃপক্ষের যে পাওনা ছিলো সেগুলো যথাযথভাবে সম্বন্বয় করা হয়েছে।